পরীমনিঃ মডেলিং থেকে উঠে এসে গড়ে তোলেন সাম্রাজ্য

মডেলিং এর মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন শামসুন্নাহার স্মৃতি। যিনি ঢাকা চলচ্চিত্র জগতে পরীমনি নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে ভালোবাসা সীমাহীন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়।
এসময় সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত নাম পরিমনি। অভিনয় জগৎ থেকে উঠে আসলেও শিল্পী হিসেবে সুনাম কামাই করতে পারেন নি তিনি। বিশৃঙ্খল জীবন, ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক ব্যবসা ও অবৈধ পর্নোগ্রাফি ব্যবসা- সব মিলিয়ে পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। অঢেল টাকা কামানোর নেশায় নাম লেখায় অন্ধকার জগতে। জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ পর্নো ব্যবসায়।
সম্প্রতি ৪ আগস্ট তার বনানীর বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মা’দ’ক সহ তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। উদ্ধার করেন ভয়ংকর নতুন মা’দ’ক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), আইস ও বিপুল পরিমাণ মদের বোতল। সেই সঙ্গে বিদেশি সিগারেটও পাওয়া যায়।
দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে-
সিনেমা শুটিংয়ের আড়ালে পরী মূলত প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলে তাকে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি।
এছাড়া বোট ক্লাবে পরীমনির মদপান করার ভিডিও প্রকাশ এবং গুলশানের অলকমিউনিটি ক্লাবে গিয়ে মদ না পেয়ে ভাঙচুর ও কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া পরী ধূমপানে অভ্যস্ত (চেইন স্মোকার)। তার ফ্ল্যাটে বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। বলা যায় ছোটখাটো বার। তার ফ্ল্যাট থেকে রাশিয়ান ভদকা, জিন, টাকিলা, হুইস্কি ও বহু মূল্যবান রেড ওয়াইন উদ্ধার করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র)
দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে পরিচালক মালেক আফসারী পরীমনীকে একজন নাটকবাজ বলে অখ্যায়িত করেছেন।
ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন-
সাত-আট মাস আগে সে কিছু উল্টাপাল্টা ছবি ফেসবুকে দেয়, আমি আবার তাকে একটু হুশিয়ার করছিলাম। এটা ঠিক না, এটা মুসলিম দেশ।
পরীমনি জবাবে বলেছিলেন,’আপনি ডিরেক্টর আছেন, ছবি ডিরেকশন দেন। আমাকে ডিরেকশন দিয়েন না। আমি আবার মাইন্ড করি নাই, থাক পোলাপাইন! তারপরও বোর্ড ক্লাবের ঘটনায় তার পক্ষ নিয়ে বলেছি, এটা বিচারের আওতায় আনা উচিত। এটাও জনগণ মেনে নিতে পারেনি। এখন আমি দেখতে চাই কি ঘটনা ঘটে। কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলতে চাই না। (তথ্যসূত্র)
কয়েকটি ব্যাংকে পরীর মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে। যার বেশিরভাগই তিনি পেয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। জানা যায় উঠতি মডেল এবং চিত্রনায়িকাদের পর্নোছবি তুলে পাঠানো হতো কথিত হাই-প্রোফাইলদের কাছে। তার মাধ্যমে অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তাকে হ্যারিয়ার গাড়ি উপহার দেন। চেয়ারম্যানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া পরীর বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
সংসার জীবনেও খুব একটা ভালো নেই পরীমনি। সাংবাদিক তামিম হাসানের সাথে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীমনির বাগদান সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে তাদের এনগেজমেন্ট ভেঙে যায়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তিনি পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। ঐ বছরেই তাদের বিচ্ছেদ হয়।
শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির জন্ম সাতক্ষীরা জেলায়। ছোট বেলায় মা-বাবা হারিয়ে বড় হন পিরোজপুরে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে। সেখান থেকেই তিনি তাঁর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে ব্যাচেলর অফ আর্টস (বিএ) (সম্মান) এ পড়াকালীন ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা)য় নৃত্য শিক্ষা লাভ করেন।
মডেলিং এর মাধ্যমে তার কর্ম জীবন শুরু করেছিলনে পরীমনি। প্রথম দিকে বিভন্ন নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও পরে টিভি নাটকেও অভিনয় শুরু করেন। ছোট পর্দা এব রূপালী পর্দা থেকেই তার অভিনয় জগতের সূচনা। এর পর তিনি হয়ে যান একজন পেশাদার অভিনেত্রী। সম্প্রতি ব্যক্তিজীবনেও তিন একজন অভিনেত্রী বলে মন্তব্য করেছেন এক পরিচালক।
শাহ আলম মন্ডল পরিচালিত ভালোবাসা সীমাহীন তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। কিন্তু তিনি আলোচনায় আসেন নজরুল ইসলাম খানের রানা প্লাজা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে তবে ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরবর্তীতে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত পাগলা দিওয়ানা ও দরদিয়া, এস এ হক অলীকের আরো ভালোবাসবো তোমায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মুক্তির আগেই ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকা চলচ্চিত্র অঙ্গনে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।
তিনি এখনো পর্যন্ত মোট ৩২টি ছবিতে অভিনয় করেন। তার মধ্যে বহু ছবি এখনো মুক্তি পায় নি। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল- মনজুড়ে তুই, লাভার নাম্বার ওয়ান, নগর মাস্তান, মহুয়া সুন্দরী। তাছাড়াও ২০১৬ সালে মন জানে না মনের ঠিকানা, পুড়ে যায় মন, রক্ত এবং ধূমকেতু চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় কত স্বপ্ন কত আশা, আপন মানুষ, সোনা বন্ধু, অন্তর জ্বালা, স্বপ্ন জাল, ইনোসেন্ট লাভ। তার প্রথম প্রযোজিত চলচ্চিত্র ক্ষত।
রূপালী পর্দায় তিনি সেকেন্ড ইনিংস, এক্সক্লুসিভ, এক্সট্রা ব্যাচেলর, নারী ও নবনীতা তোমার জন্য এ চারটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন। এর মধ্যে জাকারিয়া শৌখিন রচিত নারী ও নবনীতা তোমার জন্য নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন পরীমনি। এতে চিত্রনায়ক আমিন খান, চিত্রনায়িকা পপি এবং ঈশানাও অভিনয় করেছিলেন। প্রথম অভিনীত নাটকেই তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার সাথে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান।
চিত্রনায়িকা পরীমনী এখনো পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। যেসব ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে তাকে দেখা গিয়েছে, সেগুলি হল :
- বনফুল সুইট
- যমুনা ফ্রিজ
- স্যান্ডেলিনা সোপ
- রাঙাপরী এক্টিভ গোল্ড মেহেদী
- প্রাণ আপ
- প্রাণ চাটনি
- টপার গ্যাস স্টোভ
- ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি
খ্যাতি-কুখ্যাতি সব ছাপিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছেন নায়িকা পরীমনি। এরমধ্যে ২০১৬ সালে মহুয়া সুন্দরী চলচ্চিত্রে বাবিসাস পুরস্কারে আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিজয়ী হন। ২০১৯ সালে স্বপ্নজাল চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ সমালোচক পুরস্কারে বিজয়ী হন এবং সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক) পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। একই বছরে আমার প্রেম আমার প্রিয়া চলচ্চিত্রের জন্য ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পুরস্কারে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে বিজয়ী হন এবং ২০২০ সালে একই চলচ্চিত্রের জন্য সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (সমালোচক) পুরস্কার লাভ করেন। (তথ্যসূত্র)
Comments